Wednesday, February 19, 2025

মহা শিবরাত্রি: ভগবান শিবের পবিত্র রজনী (Maha Shivaratri: The Divine Night of Lord Shiva)

Maha Shivaratri: The Divine Night of Lord Shiva

ভূমিকা

মহা শিবরাত্রি, যার অর্থ "শিবের মহান রজনী," হিন্দু ধর্মের অন্যতম পবিত্র উৎসব যা ভগবান শিবের উপাসনার জন্য নিবেদিত। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে এই শুভ দিন উদযাপিত হয়। ২০২৫ সালে মহা শিবরাত্রি ২৬ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) পড়েছে।

এই উৎসবটি হিন্দু পুরাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ভগবান শিবের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ঐশ্বরিক ঘটনার স্মরণ করে। এটি শিব পুরাণ, লিঙ্গ পুরাণ, স্কন্দ পুরাণ, এবং পদ্ম পুরাণের মতো প্রাচীন গ্রন্থগুলিতে উল্লেখিত রয়েছে।


হিন্দু শাস্ত্রে মহা শিবরাত্রির গুরুত্ব

১. শিব ও পার্বতীর বিয়ে

শিব পুরাণ অনুসারে, মহা শিবরাত্রি ভগবান শিব ও দেবী পার্বতীর দেবোত্থানীয় বিবাহের স্মরণে পালিত হয়। পার্বতীর দীর্ঘ তপস্যার পর, শিব তাকে তার পত্নী হিসেবে গ্রহণ করেন, যা শিব (পুরুষ - চেতনা) এবং শক্তি (প্রকৃতি - শক্তি)-র মিলনকে প্রতিফলিত করে।

উৎস: শিব পুরাণ, রুদ্র সংহিতা (অংশ ২), অধ্যায় ৪৫

২. শিবের মহাতান্ডব নৃত্য

লিঙ্গ পুরাণে বলা হয়েছে যে, এই পবিত্র রাতে ভগবান শিব তার তান্ডব নৃত্য করেছিলেন, যা সৃষ্টি, সংরক্ষণ এবং বিনাশের চক্রকে প্রতিফলিত করে।

উৎস: লিঙ্গ পুরাণ, অধ্যায় ১৮

৩. শিবলিঙ্গের আবির্ভাব

স্কন্দ পুরাণে বলা হয়েছে যে, ব্রহ্মা ও বিষ্ণু তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ তা নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হন। তখন ভগবান শিব এক অসীম জ্যোতির স্তম্ভ (জ্যোতির্লিঙ্গ) হিসেবে আবির্ভূত হন এবং তাদের চ্যালেঞ্জ দেন এর শুরু ও শেষ খুঁজে বের করতে। অবশেষে, তারা শিবের সর্বোচ্চতা স্বীকার করেন এবং এই রাতকে মহা শিবরাত্রি হিসেবে পালন করা হয়।

উৎস: স্কন্দ পুরাণ, কেদার খণ্ড, অধ্যায় ১২

৪. নীলকণ্ঠ কাহিনী – শিব বিশ্বকে রক্ষা করেন

পদ্ম পুরাণে বর্ণিত আছে যে, সমুদ্র মন্থনের সময় হালাহল নামক মারাত্মক বিষ উৎপন্ন হয়েছিল। ভগবান শিব বিশ্ব রক্ষার জন্য এই বিষ পান করেন এবং তা গলায় ধরে রাখেন, যার ফলে তার কণ্ঠ নীল হয়ে যায় এবং তিনি নীলকণ্ঠ নামে পরিচিত হন। এই আত্মত্যাগের সম্মানে মহা শিবরাত্রি পালন করা হয়।

উৎস: পদ্ম পুরাণ, পাতাল খণ্ড, অধ্যায় ৪২


মহা শিবরাত্রি ২০২৫ তারিখ ও মূহূর্ত

মহা শিবরাত্রি ২০২৫: ২৬ ফেব্রুয়ারি, বুধবার

  • নিশীথ কাল পূজা সময়: ১২:০৮ AM – ১২:৫৭ AM (২৭ ফেব্রুয়ারি)

  • চতুর্দশী তিথি শুরু: ৯:৫৭ AM (২৬ ফেব্রুয়ারি)

  • চতুর্দশী তিথি শেষ: ৬:১৮ AM (২৭ ফেব্রুয়ারি)


উপবাস ও পূজা বিধি

১. উপবাস (ব্রত)

ভক্তরা কঠোর উপবাস পালন করেন, অনেকে শুধুমাত্র ফল, দুধ ও নিরামিষ খাবার গ্রহণ করেন, আবার কেউ নির্জলা ব্রত (জল ও আহার ছাড়া উপবাস) পালন করেন।

২. শিবলিঙ্গ অভিষেক

শিবলিঙ্গে দুধ, মধু, ঘি, দই, আখের রস ও জল দিয়ে অভিষেক করা হয় এবং "ওঁ নমঃ শিবায়" জপ করা হয়। শিবের প্রিয় বেল পাতা, ধুতুরা ও ভাং অর্পণ করা হয়।

৩. রাত্রি জাগরণ (জাগরণ)

ভক্তরা সারারাত জেগে ভজন, কীর্তন করেন এবং শিব পুরাণ পাঠ করেন।

৪. ধ্যান ও জপ

"মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র" ও "ওঁ নমঃ শিবায়" জপ করলে মানসিক শান্তি, সুস্বাস্থ্য ও মোক্ষ লাভ হয়।


আধ্যাত্মিক গুরুত্ব

  • আলো অন্ধকারের উপর বিজয় প্রকাশ করে।

  • আত্মসংযম, শৃঙ্খলা ও ভক্তির জয় প্রদর্শন করে।

  • শিবরাত্রি পালন করলে মন ও আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটে এবং মোক্ষের পথ সুগম হয়।


উপসংহার

মহা শিবরাত্রি কেবল একটি উৎসব নয়, এটি এক গভীর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা যা ভক্তি, শৃঙ্খলা ও আত্মসমর্পণের গুরুত্ব শেখায়। এই পবিত্র রাতে সৎভাবে উপবাস ও উপাসনা করলে, ভক্তরা মহাদেবের আশীর্বাদ লাভ করেন এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি অর্জন করতে পারেন।

ভগবান শিবের কৃপায় সকলের জীবন শান্তি, শক্তি ও মুক্তির পথে অগ্রসর হোক। ওঁ নমঃ শিবায়!

No comments:

Post a Comment