Thursday, October 29, 2020

তারা পূজা কি? [Tara Puja Ki?] (Importance of Tara Puja)


তারা পূজা কি?


কোজাগরী চতুর্দশীর দিন মানে দূর্গা পূজার দশমীর পরের চতুর্দশী বা কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার আগের দিনটি তারাপুজার দিন হিসাবে পালন করা হয়| এই দিন মাকে মূল মন্দির থেকে বের করে রাখা হয় বিরামখানায়| সকালে মায়ের স্ন্যানের পর মাকে নিয়ে আসা হয় এই বিরামখানায়| তারপর সারাদিন ধরে চলে পুজো| মাকে সাজানো হয় রাজবেশে| এই দিন দুপুরে মাকে ভোগ দেয়া হয় না| ভক্তরা যা নিয়ে যায় মা আজ তাই খান সারাদিন ধরে| দুপুরে বিশ্রাম ও হয় না| সারাদিনের শেষে সন্ধ্যের আগে মা চলে যান মূল মন্দিরে তারপর হয় মায়ের সন্ধ্যা আরতি| এবং তারপর মায়ের শীতলী ভোগ|
তারাপুজার প্রচলন তারাপীঠে অনেকদিন আগে থেকে| কথিত আছে আজকের দিনে মহামুনি বশিষ্টদেব তারা মাকে প্রথমবার দর্শন দিয়েছিলে| সেই হিসাবে তারাপীঠে মায়ের আগমন তিথি হিসাবেও ধরা হয়| তারপর জয়দত্ত বণিক তারা মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে মায়ের শিলামূর্তি আবিষ্কার করেন আজকের দিনে| উনি প্রথম যিনি মায়ের মন্দির বানিয়ে শিলামূর্তি পুজো করেন| সেই শিলামূর্তি আজও মন্দিরে পুজো হয়| এছাড়া মায়ের যে মন্দির জয়দত্ত বণিক প্রথম বানিয়েছিলেন, সেই মন্দির অনেক দিন আগেই কালের গহ্বরে হারিয়ে হয়| তবে পর আশ্চর্যজনক ভাবে সেটা উদ্ধারও হয় এবং বর্তমানে সেখানে সাধক বামদেবের সমাধি| সব দিক দিয়েই তারাপুজার গভীরতা অনেক|

জয় তারা মায়ের জয়| জয় শ্রী দূর্গা জয় তারা|

Thursday, October 22, 2020

বেলুড় মঠের দুর্গাপূজা- প্রথম দুর্গাপূজা (First Durga Puja in Belur Math)

 

বেলুড় মঠের দুর্গাপূজা- প্রথম দুর্গাপূজা


বেলুড় মঠের শারদীয়া দুর্গাপূজার ঐতিহ্যগত তাৎপর্য হলো ১৯০১ সালে স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দের দ্বারাই এই পূজা প্রথম অনুষ্ঠিত হয় এবং পরমারাধ্য শ্রীশ্রীমা সারদাদেবীও এই পূজার সময় বেলুড় মঠে উপস্থিত ছিলেন স্বামীজীর ইচ্ছানুসারে| শ্রীশ্রীমায়ের নামেই এই পূজার 'সঙ্কল্প' করা হয় (এবং আজও সেই ধারা চলে আসছে)| আসলে সন্নাসীগণ 'সঙ্কল্প' করে কোনো পূজা বা বৈদিক ক্রিয়াকান্ড করার অধিকারী নন বলেই আদর্শ গৃহস্থ-আশ্ৰমী শ্রীশ্রীমা (যদিও ত্যাগ-তপস্যায় তিনি সন্ন্যাসীরও শিরোমণি) নামেই বেলুড় মঠের দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়| বিষয়টি খুব অভিনব এই কারণে যে, শ্রীশ্রীমায়ের দেহত্যাগের এতো বছর পরেও সেই একই ধারায় বেলুড় মঠের পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে| অথবা স্বামীজী যে কল্পনা করতেন শ্রীশ্রীমাকে 'জ্যান্ত দূর্গারূপে', প্রতি বছর মৃন্ময়ী মূর্তিতে কী সেই চিন্ময়ী মায়েরই অধিষ্ঠান হয়? আমরা এও জানি, স্বামীজী 'আগমনী' গান বড়ই ভালবাসতেন এবং নিজেও গাইতেন | স্বয়ং শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেব ও স্বামীজীর কণ্ঠে 'আগমনী' গান শুনে সমাধিস্থ হয়েছিলেন| বেলুড় মঠেও প্রায়ই একটি 'আগমনী' গান গাইতেন তাঁর প্রিয় বিল্ববৃক্ষতলে বসে| গানটি হলো-

"গিরি গণেশ আমার শুভকারী,

পূজে গণপতি পেলেন হৈমবতী

চাঁদের মালা যেন চাঁদ সারি সারি||

বিল্ববৃক্ষমূলে পাতিয়া বোধন,

গণেশের কল্যাণে গৌরীর আগমন,

ঘরে আনব চন্ডী, কর্ণে শুনবো চন্ডী

আসবে কত দন্ডী জটাজূটধারী|"

সংকলন: বেলুড় মঠে স্বামীজীর দুর্গাপূজা (স্বামী দেবেন্দ্রানন্দ) [উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা]

Wednesday, October 21, 2020

কি আনন্দের কথা উমে গো মা [Backstory of Maa Sarada- Briefly]

 

কি আনন্দের কথা উমে গো মা


এক সময় (সম্ভবত ১৮৯১ সালে) জয়রামবাটী গ্রামে একজন বৈরাগী (হরিদাস) এসে বেহালা বাজিয়ে গাইত দাশরথি রায়ের লেখা একটি আগমনী গান ---

"কি আনন্দের কথা উমে (গো মা)

(ওমা) লোকমুখে শুনি সত্য বল শিবানী,

অন্নপূর্ণা নাম তোর কি কাশীধামে?

অপর্ণে তোমায় যখন অর্পণ করি|

ভোলানাথ ছিলেন মুষ্টির ভিখারী|

এখন নাকি তার দ্বারে আছে দ্বারী,

দেখা পায় না তাঁর ইন্দ্র-চন্দ্র-যমে||

ক্ষ্যাপা ক্ষ্যাপা আবার বলত দিগম্বরে,

গঞ্জনা সয়েছি কত ঘরে পরে|

এখন নাকি তিনি রাজা কাশীপুরে,

বিশ্বেশ্বরী তুই বিশ্বেশ্বরের বামে||


এই গান শুনে চোখের জলে ভাসতেন মা শ্যামাসুন্দরী দেবী- ও গান যেন তাঁর মেয়ে সারদামণিরও জীবনসঙ্গীত| চোখে তাঁর দেখা দিত আনন্দাশ্রু, গানটি বারবার শুনেও যেন তৃপ্তি হতো না| আবেগ-জড়িত কণ্ঠে উপস্থিত সবাইকে বলতেন- |হ্যাঁ গো, তখন সকলেই জামাইকে ক্ষেপা বলত, সারদার অদৃষ্টিকে ধিক্কার দিত| আমায় কত কথা শোনাত, মনের দুঃখে মোর যেতুম| আর আজ দেখ, কত বড়ো ঘরের ছেলেমেয়েরা দেবীজ্ঞানে সারদার পা পূজা করছে|"


সত্যিই তো, এ মেয়ের জন্য কম গঞ্জনা সৈতে হয়েছে তাঁকে? জয়রামবাটী গ্রামের সর্বত্র জানাজানি হয়ে গিয়েছিল সে কথা- দক্ষিণেশ্বরে মা কালীর মন্দিরে পূজারী হয়ে তাঁর জামাই নাকি পাগল হয়ে গিয়েছে- রাতদিন কেবলই মা! মা! করে কাঁদে| আর সেই সব কথা শুনে গাঁয়ের বৌ-ঝিরা তাই কানাকানি করত- "ওমা! শ্যামার মেয়ের ক্ষেপা জামাইয়ের সাথে বে হয়েছে|" আর তাই শুনে মেয়ের দুঃখে মায়ের বুক ভেঙে যেত| ভাবতেন, সবই অদৃষ্টের ফের! কিন্তু এই বুক ভাঙা দুঃখের মাঝেও শ্যামাসুন্দরী দেবী সময় সময় একটু সান্ত্বনা পেতেন যখন ওই গাঁয়েরই শুদ্ধস্বভাবা ভানুপিসি এসে খুব জোরের সঙ্গে তাঁকে বলতেন- :বউ ঠাকরুন, তোমার জামাই শিব, সাক্ষাৎ কৃষ্ণ- এখন যা বিশ্বাস করতে পারছ না, পরে পারবে বলে রাখছি|"


সারদামণিও জানতেন সে কথা| গিরিরাজ কন্যা উমার মতোই জানতেন তাঁর আত্মভোলা পতির স্বরূপ| জানতেন, গাঁয়ে যা রটেছে তা সত্যি নয়| তাঁর দেবতুল্য পতি পাগল হতেই পারেন না| মন তাঁর পড়ে থাকে দক্ষিণেশ্বরে- সেখানে গিয়ে পতিদেবতার সেবাযত্নের জন্য আকুল আগ্রহে দিন কাটাতে থাকেন| সে সুযোগও তাঁর এসে যায়| সেবার (চৈত্র মাস, ১২৭৮ সাল) কি এক পর্ব উপলক্ষে গ্রাম থেকে অনেক লোক কলকাতায় এসেছিলেন গঙ্গাস্নান করতে| সেই সময় সারদামণিও ভাবতেন- "সবাই এমন বলছে, আমি গিয়ে একবার দেখে আসি সেন আছেন|" বাবা তাঁর সেই মনের কথা বুঝতে পেরে তাঁকে নিয়ে হাঁটাপথে দক্ষিণেশ্বরের উদ্দেশে রওনা হলেন|


অনেক কষ্টে সারদামণি দক্ষিণেশ্বরে এসে পৌঁছলে তাঁর আপনভোলা পতি তাঁকে সাদরে গ্রহণ করলেন| দেখেশুনে সারদামণি বুঝলেন, গাঁয়ে যা রটেছে তা মিথ্যা- সব মিথ্যা| তাঁর পতি পাগল কোথা- তিনি যে দক্ষিণেশ্বরে ভক্তের রাজা| তাঁকে নিয়ে সেখানে আনন্দের হাট- পতি তাঁর আশ্রিতবৎসল- যে তাঁর শরণাগত তাঁকেই আশ্রয় দিচ্ছেন- দেখাচ্ছেন ভক্তি-মুক্তির পথ|


তাই জয়রামবাটীতে সেই বৈরাগীর আগমনী গান শুনে শ্রীমা সারদামণির জীবনের সেই অধ্যায়ের কথাই তখন সকলের মনে পড়ে যেত| সেই গান শুনে অনেকেই কাঁদতেন, যেমন কাঁদতেন শ্যামাসুন্দরী দেবী, সেইসঙ্গে যোগীন-মা, গোপাল-মা-- সারদামণির দুই সহচরী| এমনকি মহাকবি গিরিশচন্দ্রও যখন কলকাতা থেকে আসতেন, এই গান শুনে  তিনি অশ্রু সংবরণ করতে পারতেন না| তিনি শ্রীমাকে মনে করতেন-- "মাস জগদম্বা, জগজ্জননী"| আর বিশ্ববরেণ্য সন্নাসি স্বামী বিবেকানন্দের কথা তো আগেই বলা হয়েছে, মা সারদামণি তাঁর কাছে ছিলেন  সাক্ষাৎ 'জ্যান্ত দুর্গা'| 


সংকলন: বেলুড় মঠে স্বামীজীর দুর্গাপূজা (স্বামী দেবেন্দ্রানন্দ) [উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা]

Tuesday, October 20, 2020

জ্যান্ত দূর্গা [Living Durga]

 

 জ্যান্ত দূর্গা

বেলুড় মঠের ঐতিহ্যগত দুর্গাপূজার এই প্রেক্ষাপট[১]| তবে মঠে মৃন্ময়ী মূর্তি এনে আরাধনার আগে স্বামীজী এক চিন্ময়ী মূর্তি প্রতিষ্ঠার ধ্যান বা পরিকল্পনাও করেছিলেন| তিনি স্বামীজীর জ্যান্ত দূর্গা- শ্রীরামকৃষ্ণসংঘ-জননী-- মা সারদামনি|

বিবেকানন্দ- পরিকল্পিত জ্যান্ত দুর্গার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সেই ঐতিহাসিক চিঠিটির কথা এইখানে উল্লেখ করতেই হয়| ১৮৯৩ সালে আমেরিকা থেকে স্বামীজী চিঠিটি লেখেন তাঁর প্রিয় গুরুভ্রাতা স্বামী শিবানন্দজীকে| বিশ্বধর্মমহাসভায় স্বামীজীর তখন জয়জয়কার| এই জয় শ্রীরামকৃষ্ণও তথা সনাতন হিন্দুধর্মের| এই সময়েই স্বামীজী শ্রীরামকৃষ্ণ-আন্দোলনকে বিশ্বব্যাপী সক্রিয় করার জন্য একটি স্থায়ী কেন্দ্র বা মঠ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও করেন| শক্তিরূপিণী মা সারদামনি তাঁর এই প্রেরণার উৎস| তখনো বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠা হয়নি| শ্রীরামকৃষ্ণ অন্তরঙ্গ পার্ষদরা প্রথমে বরাহনগরের একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে (যা ভুতুড়ে বাড়ি নামেই প্রসিদ্ধ ছিল) কিছুদিনের জন্য বসবাস করে পরে তা অবাবহার্য বলে কলকাতারই  আলমবাজার অঞ্চলে অন্য একটি ভাড়া বাড়িতে এসে ওঠেন| এদিকে বিশ্বধর্মমহাসভায় বিজয়লাভ করে স্বামীজী ভারতবর্ষের উন্নতিকল্পে যেসব নবীন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তার মধ্যে একটি স্থায়ী কেন্দ্র বা মঠ স্থাপনের বিষয়ও ছিল|

শক্তিরূপিণী মা সারদামনির বিষয়ে স্বামী শিবানন্দজীকে[২] লিখিত স্বামীজীর সেই ঐতিহাসিক চিঠির কিছু অংশ--- "মা ঠাকরুন কি বস্তু বুঝতে পারিনি, এখন কেহই পার না, ক্রমে পারবে| ভায়া, শক্তি বিনা জগতের উদ্ধার হবে না| আমাদের দেশ সকলের অধম কেন, শক্তিহীন কেন? শক্তির অবমাননা সেখানে বলে| মা-ঠাকুরানী ভারতে পুনরায় সেই মহাশক্তি জাগাতে এসেছেন, তাঁকে অবলম্বন করে আবার সব গার্গী, মৈত্রেয়ী জগতে জন্মাবে| দেখেছ কি ভায়া, ক্রমে সব বুঝবে| এই জন্য তার মঠ প্রথমে চাই| ...আমেরিকা ইউরোপে কি দেখেছি? শক্তির পূজা, শক্তির পূজা| তবু এরা অজান্তে পূজা করে, কামের দ্বারা করে| আর যারা বিশুদ্ধভাবে, সাত্ত্বিকভাবে, মাতৃভাবে পূজা করবে, তাদের কি কল্যাণ না হবে! আমার চোখ খুলে যাচ্ছে| দিন দিন সব বুঝতে পারছি| সেইজন্য আগে মায়ের মঠ করতে হবে| আগে মা আর মায়ের মেয়েরা, তার পর বাবা আর বাপের ছেলেরা, এই কথা বুঝতে পারো কি?

           "এই দারুন শীতে গায়ে গায়ে লেকচার করে লড়াই করে টাকা জোগাড় করছি--- মায়ের মঠ হবে| 

           "বাবুরামের মার বুড়ো বয়সে বুদ্ধির হানি হয়েছে| জ্যান্ত দূর্গা ছেড়ে মাটির দূর্গা পূজা করতে বসেছে| দাদা, বিশ্বাস বড় ধন, দাদা, জ্যান্ত দুর্গার পূজা দেখাব, তবে আমার নাম| তুমি জমি কিনে জ্যান্ত দূর্গা মাকে যেদিন বসিয়ে দেবে, সেই দিন আমি একবার হাঁফ ছাড়ব| তার আগে আমি দেশে যাচ্ছি না| যত শীঘ্র পারবে| টাকা পাঠাতে পারলে আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচি; তোমরা যোগাড় করে এই আমার দুর্গোৎসবটি করে দাও দেখি|..."

[১] স্বামীজীর দূর্গাপূজা করার ইছা|(অধ্যায়)

[২] স্বামীজী স্বামী ব্রাহ্মানন্দজীকেও অনুরূপ এক পত্র দেন| 'অতীতের স্মৃতিতে' (স্বামী শ্রদ্ধানন্দ লিখিত) জানা যায় -- "রাজা মহারাজজির নিকট জমা চিঠিগুলির মধ্যে স্বামীজীর একখানি বহু মূল্যবান দীর্ঘ চিঠি পাওয়া গিয়েছিল| তাহাতে স্বামীজী শ্রীশ্রীমায়ের সম্বন্ধে নিজের ধারণার বিষয় খুব আবেগ ভরে প্রকাশ করিয়াছিলেন| শ্রীশ্রীমায়ের মহিমা এতো সহজ ভাষায় বর্ণনা -- কালীকৃষ্ণ (স্বামী বিরজানন্দ) পড়িয়া আশ্চর্য হইয়া গেলেন| চিঠিখানি যে টেবিলে বসিয়া কাজ করিতেন উহার ড্রয়ারে সযত্নে তুলিয়া রাখিয়াছিলেন|" কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয়, উক্ত চিঠিটি কিভাবে হারিয়ে যায়|


সংকলন: বেলুড় মঠে স্বামীজীর দুর্গাপূজা (স্বামী দেবেন্দ্রানন্দ) [উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা]

Thursday, October 15, 2020

স্বামীজীর দূর্গাপূজা করার ইছা [Swamiji's Wish for Durga Puja]

 

স্বামীজীর দূর্গাপূজা করার ইছা

স্থান - বেলুড় মঠ

কাল ১৯০১


স্বামীজী - ওরে, একখানা রঘুনন্দনের 'অষ্টাবিংশতি-তত্ত্ব' শিগগির আমার জন্য নিয়ে আসবি|

শিষ্য - আচ্ছা মহাশয়| কিন্তু রঘুনন্দন স্মৃতি - যাহাকে কুসংস্কারের ঝুড়ি বলিয়া বর্তমান শিক্ষিত সম্প্রদায় নির্দেশ করিয়া থাকে, তাহা লইয়া আপনি কি করিবেন?

স্বামীজী - কেন? রঘুনন্দন তদানীন্তন কালের একজন দিগগজ পন্ডিত ছিলেন, প্রাচীন স্মৃতিসকল সংগ্রহ  করে হিন্দুর দেশকালোপযোগী নিত্যনৈমিত্তিক ক্রিয়াকলাপ লিপিবদ্ধ করে গেছেন| সমস্ত বাংলা দেশ তো তার অনুশাসনেই আজকাল চলছে| তবে তৎকৃত হিন্দুজীবনের গর্ভধান থেকে শ্মশানান্ত আচার প্রণালীর কঠোর বন্ধনে সমাজ উৎপীড়িত হয়েছিল| শৌচে- প্রস্রাবে, খেতে- শুতে, অন্য সকল বিষয়ের তো কথাই নেই, সব্বাইকে তিনি নিয়মে বদ্ধ করতে প্রয়াস পেয়েছিলেন| সময়ের পরিবর্তনে সে বন্ধন বহুকাল স্থায়ী হতে পারল না| সর্বদেশে সর্বকালে ক্রিয়াকান্ড, সমাজের আচার প্রণালী সর্বদাই পরিবর্তন হয়ে যায়| একমাত্র জ্ঞানকান্ডই পরিবর্তন হয় না| বৈদিক যুগেও দেখতে পাব ক্রিয়াকান্ড ক্রমেই পরিবর্তন হয়ে গেছে| কিন্তু উপনিষদের জ্ঞানপ্রকরণ আজ পর্যন্ত একভাবে রয়েছে| তবে তার Interpreters (ব্যাখ্যাতা) অনেক হয়েছে এইমাত্র|

শিষ্য - আপনি রঘুনন্দনের স্মৃতি লইয়া কি করিবেন?

স্বামীজী - এবার মঠে দুর্গোৎসব করবার ইছা হচ্ছে| যদি খরচার সংকুলান হয় তো মহামায়ার পূজা করব| তাই দুর্গোৎসব বিধি পড়বার ইছা হয়েছে| তুই আগামী রবিবার যখন আসবি, তখন ঐ পুস্তকখানা সংগ্রহ করে নিয়ে আসবি|

শিষ্য - যে আজ্ঞা|


সংকলন: বেলুড় মঠে স্বামীজীর দুর্গাপূজা (স্বামী দেবেন্দ্রানন্দ) [উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা]

Tuesday, October 6, 2020

কি ভাবে ঠিক হয় মা দুর্গা কোন বাহনে আসবেন আর কোন বাহনে যাবেন? [How Maa Durga selects her conveyance every puja?]

 

মা দুর্গা

মা দুর্গা প্রতিবছর সপরিবার আসেন এই মর্ত্যে| মহালয়ার দিন কৈলাশ থেকে যাত্রা শুরু করেন আর আবার কৈলাশে ফিরে যান বিজয়াদশমীর দিন| পুরান অনুসারে সপ্তমীর দিন মা মর্ত্যে প্রবেশ করেন| প্রতিবছর মা দুর্গা চার রকম বাহনের মধ্যে কোনো একটাতে আসেন আবার ওই চার রকমের কোনো একটাতে ফেরত যান| এই চার রকম বাহন হল: হাতি, ঘোড়া, নৌকা আর দোলা বা পালকি| খুব সহজে জেনেনি কিভাবে বুঝব মা কোন বাহনে আসবেন আর কোন বাহনে যাবেন|

মা দুর্গা এর আসা বা যাওয়া নির্ভর করে সপ্তাহের কোন বারে মা আসছেন বা যাচ্ছেন| হিসাবটি এইরকমের: রবিবার এবং সোমবার হলে হাতি, মঙ্গলবার এবং শনিবার হলে ঘোড়া, বুধবার হলে নৌকা আর বৃহস্পতি এবং শুক্রবার হলে দোলা বা পালকি| মা এর আসা হিসাব করতে হবে সপ্তমী -এর দিনটি| আর যাওয়া হিসাব করতে হবে দশমী -এর দিনটি|